জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডে ষষ্ঠ আসরে ‘পাথ ফাইন্ডার’ হিসেবে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয়েছে ব্যঙ্গাত্মক ম্যাগাজিন ‘উন্মাদ’ এবং গবেষণার জন্য ইয়াংগুয়াং ম্রো’কে। সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)-এর চেয়ারপার্সন সজীব ওয়াজেদ জয় ইয়াং বাংলার এই পুরস্কারটি তুলে দেন উন্মাদ ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব ও ইয়াংগুয়াং ম্রো’র হাতে।
বর্তমান সময়ে শুধু স্যাটায়ার ভিত্তিক উপমহাদেশের একমাত্র ম্যাগাজিন সম্ভবত ‘উন্মাদ’। ৪৫ বছর যাবৎ যেই ব্যঙ্গাত্মক (স্যাটায়ার) ম্যাগাজিন টিকে রয়েছে বাংলাদেশের বুকে। দেশের অধিকাংশ কার্টুনিস্টদের শুরু এই ম্যাগাজিন থেকে। দেশ ও জাতি গঠনে ভূমিকা রাখার জন্য এই ম্যাগাজিনটিকে সম্প্রতি দেয়া হয়েছে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডের আজীবন সম্মাননা।
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে একদিকে চলছিল চরম অস্থিরতা। অন্যদিকে তারুণ্যের মাঝে নতুন কিছু করার অদম্য উৎসাহ। এমনই এক সময়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুই তরুণ ইস্তিয়াক হোসেন ও কাজী খালিদ আশরাফ ১৯৭৮ সালে মে মাসে শুরু করেন ত্রৈমাসিক উন্মাদ। কার্টুন ও স্যাটায়ার ভিত্তিক এই ম্যাগাজিনে তাদের সহযোগিতা করেন সুলতানুল ইসলাম, নওশাদ নবী, সাইফুল হক ও ইলিয়াস খান। দ্বিতীয় সংখ্যায় যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের ছাত্র কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব। এখান থেকে ভিন্ন এক যাত্রার শুরু। বাংলাদেশের রাজনীতি ও প্রেক্ষাপট নিয়ে বেশ তীর্যকভাবে নিজের অবস্থান জানিয়ে গেছে এই ম্যাগাজিন তার প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে।
সমাজ গঠন ও জাতি গঠনে স্যাটায়ারের মাধ্যমে এক অনন্য অবদান রেখে গেছে এই ম্যাগাজিন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনেও বড় ভূমিকা ছিলো এই ম্যাগাজিনের। শুরুতে ত্রৈমাসিক হলেও খুব দ্রুতই এটি প্রতি মাসে প্রকাশিত হওয়া শুরু করে। তরুণদের মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলে এই ম্যাগাজিন।
জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডের মঞ্চ থেকে বলা হয়, এটি শুধু একটি ম্যাগাজিন নয়। এক ঝাঁক তরুণকে কার্টুনিস্ট হওয়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছে উন্মাদ। উন্মাদ ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব বলেন, ৪৫ বছর পর এমন একটি অ্যাওয়ার্ড আমাদের কার্টুনিস্টদের অনুপ্রেরণা দিয়েছে। আমাদের উন্মাদের কার্টুনিস্টরাই এঁকেছে গ্রাফিক নভেল মুজিব। বিষয়টি গর্বের এই পুরষ্কার দেয়ায় সিআরআই ও ইয়াং বাংলাকে ধন্যবাদ জানান তিনি। ।
মাসিক এই ব্যঙ্গাত্মক (স্যাটায়ার) ম্যাগাজিনের প্রায় শুরু থেকেই পরিচালনা করেছেন আহসান হাবীব। ১৯৮০-র দশকে সামরিক শাসনামলে রাজনৈতিক কার্টুন প্রকাশ করায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার শিকার হন তিনি। তবুও উন্মাদের ধার কমেনি এতটুকুও। এখনও কার্টুনিস্ট হতে চাওয়া তরুণদের জন্য উন্মাদ বিভিন্ন কর্মশালা আয়োজন করে। বর্তমানে ম্যাগাজিনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ৫০ জনের বেশি সদস্য রয়েছেন।
অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে দূরের অন্ধকারে এক আলোকরশ্মি ইয়াংগুয়াং ম্রো। লেখালেখি ও গবেষণাই তার কাজ। তিনি ম্রো সম্প্রদায়ের ভাষায় প্রথম বই ‘টোটং’ তৈরি করেন। ম্রো ভাষার প্রথম এই কথাসাহিত্যিক ‘ম্রো ফেয়ারি টেলস’ বই লিখেছেন। ২০১৩ সাল থেকে মাত্র ছয় ব্যক্তির কথ্য ভাষা ‘রেণমিতাচ্যা ভাষা’ সংরক্ষণে কাজ করেছেন তিনি। নিজের সম্প্রদায়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ, অর্থ ও ভিত্তিকে ছড়িয়ে দিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ম্রো ভাষায় অনুবাদ করে প্রকাশ করেন তিনি। ম্রো ভাষা সংরক্ষণে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে নিজের এলাকায় কুঁড়েঘর তৈরি করেছে মনে প্রাণে জুমচাষ করা এই ব্যক্তি।
তিনি ইয়াং বাংলা এবং সিআরআইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমার বেড়ে ওঠা দুর্গম এলাকায়, যেখানে আমরা বাংলা ভাষা জানতাম না। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন মা-বাবা, গ্রামের বয়স্করা গল্প শোনাতেন এবং বলতেন। এগুলো সংরক্ষণ ও রক্ষা করতে হয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু কি অবদান রেখে গেছেন তাও নিজ ভাষায় লেখার চেষ্টা করেছি।
তথ্যসূত্র : বাসস
Leave a Reply